ঠিক”ঠাক পথ চিনে ঘরে ফিরতে পারতে বাহ”কশ্রেণির কবুতর। কবুতরের ”এই জটিল নেভিগেশন ক্ষমতা”কে কাজে লাগিয়ে প্রাচীন কাল থেকেই”” চলে চিঠি আদান-প্রদা”ন।শোনা যায় কবুত”রের মাধ্যমে জুলিয়াস সিজার রোমে গল জয়ের বার্তা পাঠিয়েছিলেন। নেপোলি”য়ন বোনাপোর্টও ১৮১৫ সালে ওয়াটারলু যু”দ্ধে পরাজয়ের বার্তা পাঠাতে কবুত”রে”র সাহায্য নেন।ধারণা করা হয়, কবুতরের চোখে”র” অপটিক স্নায়ু প্রেরিত রাসায়নিক সং”কে”তের কারণে তারা গতিপথ সম্পর্কে ধারণা পায়। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ব্যবহার করে কবুতরের গতিপথ বোঝার পদ্ধতিকে বলা হয় ম্যাগনেটোরিসেপশন।
কিন্তু তারা ঠিক কীভাবে এই কাজ করে তা আজও পরিষ্কার নয়। সম্প্রতি প্রসিডিং অব ন্যাশনাল” অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস প্রকাশিত এক গবেষণায় গবেষকরা ম্যাগনেটোরিসেপশনের সঙ্গে তাদের কানের ভেতর পাওয়া ক্ষু”দ্র আয়রন সমৃদ্ধ লাম্পসের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেতে একটি পরীক্ষা চালান।গবেষণার নেতৃ”ত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের স্কুল অব ফিজিক্সের জ্যেষ্ঠ লেকচারার ডেভিড সি”ম্পসন ও তার দল
বিজ্ঞানীরা ম্যাগনেটোরিসেপশনের সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে দুটি তত্ত্ব দিয়েছেন।এর মধ্যে ”প্রথমটি হলো দৃষ্টিনির্ভর ‘ফ্রি-রেডিক্যাল পেয়ার’ মডেল। এই মডেল অনুসারে, বাহক ও অন্যান্য পরিযায়ী পাখির চোখের রেটিনায় ক্রিপ্টোক্রোমস না”মের প্রোটিন আছে। এই প্রোটিনগু”লো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চৌম্বকক্ষেত্রের তারতম্যের সাথে ভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক সিগন্যাল তৈরি করে। এখন পর্যন্ত এই ধারণাটিই বেশি” প্রচলিত।স্নায়বিক” এই সংকে”তের মাধ্যমে পাখিগুলো পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ‘দেখতে
‘ পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে তত্ত্বটি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত নয়।তত্ত্বটি হলো তাদের লাম্পসের অভ্যন্তরে থাকা চৌম্বক পদা
র্থের কারণে তারা দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।প্রকৃতিতে ম্যাগনেটোট্যাকটিক ব্যাক”টেরিয়া নামের একশ্রেণির ব্যা”কটেরিয়ায় ম্যাগনেটিক পার্টিকেল পাওয়া যায়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ম্যাগনেটিক পার্টিকেল তৈরির মাধ্যমে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্ররেখা বরাবর অভিমুখী হয়ে অবস্থান” করে।বিজ্ঞানীরা এখন বিভিন্ন প্রজাতির মাঝে ম্যাগনেটিক পার্টিকেলের সন্ধান করছেন।
কয়েক দশক আগে কবুতরের ওপরের চঞ্চুতে চৌম্বকীয় পার্টিকেল পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে, পরবর্তীতে দেখা যায় চঞ্চুতে কেবল আয়রন সঞ্চিত থাকে এবং সেটি চৌম্বকীয় সংকেতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
কানের ভেতর ম্যা”গনেটোরিসেপ্টরের সন্ধান-
চোখ ও ঠোঁটের ম্যাগনেটোরিসে”প্টরের সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য অবস্থান ধরা হয়েছিল কবুতরের কানে। ২০১৩ সালে কবুতরের কানের ভেতর কিউটিকুলোসোমস নামের আয়রন কণা পাওয়া যায়।
ক”বুতরের শ্রবণ শক্তি ও উড়ার সময় ভারসাম্য রক্ষার” জন্য ব্যবহৃত স্নায়বিক সিস্টেমের সঙ্গেই কিউটিকুলোসমের সন্ধান মিলে। তাত্ত্বিকভাবে কবুতরের চৌম্বকীয় স্নায়বিক ক্ষমতা থাকলে তা সেন্সরি সিস্টেমে”র কাছাকাছিই অবস্থিত কি”টিকুলোসোমগুলো বালির দানার চেয়েও ১০০০ গুণ ছোট। এত ক্ষুদ্র বস্তুতে সৃষ্ট সূক্ষ্ম চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নির্ণয়ের জন্য গবেষক দল ডায়মন্ড সেন্সর ব্যবহারের” মাধ্যমে বিশেষ চৌম্বকীয় মাইক্রোস্কোপ নির্মাণ করেন।
যেভাবে বাতিল হলো এই তত্ত্ব-
কবুতরের কা”নের ভেতরের পাতলা অংশ সরাসরি ডায়মন্ড সেন্সরের ওপর রেখে পরীক্ষা করা হয়। টিস্যুতে বিভিন্ন শক্তির চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করে কিউটিকুলোসমের চৌম্বকীয় সংবেদনশীলতা পরিমাপ করা হয়।গবেষণার ফল অনুযায়ী কিউটিকুলোসমের ”চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য ম্যাগনেটোরিসেপ্টর হিসেবে কা”জ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। কবুতরের ম্যাগনেটোরিসেপ্টর হিসেবে কাজ করতে কণাগুলোর আরও এক লাখ গুণ বেশি সক্রিয়” হওয়া প্রয়ো”জন।তবে, গবেষকরা কবুতরের ম্যাগনেটোরিসেপ্টর খুঁজে না পেলেও নতুন চৌম্বকীয় মাইক্রোস্কোপ প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বেশ আনন্দিত।একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইঁদুর, মাছ, কচ্ছপসহ বিভি”ন্ন প্রজাতির প্রাণীতে ম্যাগ”নেটিক পার্টিকেল খুঁজে পেতে গ”বেষণা” করবে”ন তারা।
Leave a Reply